কেমন হল ‘গোলন্দাজ’ ?
অভিনয়: দেব, ইশা সাহা, ইন্দ্রাশিস, উজান চট্টোপাধ্যায়, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, অগ্নি প্রমুখ
পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
এই ছবির বিশাল অভিনেতা তালিকার সকলের নাম স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করা গেল না। তবে এই ছবি তাঁদের সকলেরই। কারণ ভারতীয় ফুটবলের জনক হিসেবে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী একটি দলগত প্রয়াসের মাধ্যমেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। এই ছবির পটভূমিকা, নির্মাণ বারবার ‘লগান’ ছবিটির কথা মনে করায়। একরোখা বাঙালি পুরুষ, তাঁর অন্তর্গত দলে এক-এক করে জাত-পাত নির্বিশেষ ক্রীড়াপ্রেমী, সর্বোপরী বিদেশি প্রভুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে পড়া একদল মানুষ… এখানেও এমনটাই হয়েছে। ইতিহাস নিয়ে পরিচালকের কাজ করার নিদর্শন আগেও প্রমাণিত। তাঁর গবেষণায় ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা ফিকশন আকারে নেমে এসেছে, আর সময়টাও এমনই ছিল যে সেগুলোই খুব সিনেম্যাটিক হয়ে উঠেছে। ট্রেডস কাপে বাংলার একমাত্র দল হিসেবে ইংরেজের সঙ্গে খেলতে নামার জন্য যে অসাধ্যসাধন করেছিল নগেন্দ্রপ্রসাধ সর্বাধিকারীর নেতৃত্বাধীন শোভাবাজার ক্লাবের ফুটবল দল, তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য এই ছবি। ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় উজান, অগ্নি, ইন্দ্রাশিস, পদ্মনাভ, জন ভট্টাচার্য বেশ উজ্জ্বল এবং সপ্রতিভ।
অ্যালেক্স তো এখন বাংলা ছবির টম অল্টারের মতোই ঘরের মানুষ হয়ে গিয়েছেন। কৃষ্ণকমলিনীর চরিত্রে ইশার উপস্থিতি স্নিগ্ধ, তবে উপস্থিতির পরিসর বড়ই ছোট! দেব এই ছবির কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর মুখে লম্বা সংলাপ এখনও ধাক্কা খায়, বাংলাকে ঠিক বাংলা বলে মনে হয় না। বাঙালির আত্মসম্মানবোধ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি অহেতুক রাগের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলেন। নগেন্দ্রর অভিমানের চিহ্নস্বরূপ বারংবার উলটোহাতে গোঁফে তা দেওয়ার ম্যানারিজ়মটা একটা মজার বিষয় হতেই পারত। কিন্তু তা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। তেমনই ছোট অথচ সম্ভাবনাময় চরিত্রগুলোর নেপথ্য দেখাননি পরিচালক। মনি দাসের অ্যাংস্ট বোঝালেন অথচ ক্যাপ্টেন জিতেন্দ্রর চাপা আগুনের কারণ কী, বোঝা গেল না। একজন অভিনেতা, যতবার পরদায় এসেছেন, হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে উঠেছে… তিনি অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তিনি ভার্গব, ছবির কথক। ফুটবলে ইংরেজকে হারানোর নগেন্দ্রের অঙ্গীকারের মুহূর্তে অনির্বাণের শিববেশে তাণ্ডব মূর্ত হয়ে ওঠে। তিনি কখনও সন্ন্যাসী, কখনও বহুরূপী, তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মনে রাখার মতো, প্রভাবশালী। চিত্রগ্রহণ ঝকঝকে, তবে সম্পাদনা বেশ ঝটকা খায় কিছু দৃশ্যে। ছবির সঙ্গীত বেশ ভাল। শোভনের গাওয়া গানগুলো মনে থেকে যায়। বিশেষত ‘যুদ্ধংদেহী’ গানটি। তবে যা সবচেয়ে বেশি মনে থাকে, তা হল, বাঙালির লড়াইয়ে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আজ বাঙালির সেই আত্মগরিমা কোথায় গেল, ভাবতে ইচ্ছে করে।